ট্রাম্প বিরোধী ‘নো কিংস’ বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

ট্রাম্প বিরোধী ‘নো কিংস’ বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর ও অঙ্গরাজ্যে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নো কিংস’ নামক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ট্রাম্পবিরোধী শত শত বিক্ষোভ। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বিরল সামরিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তখনই এসব প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।

এই কুচকাওয়াজটি ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে, এবং তা ট্রাম্পের জন্মদিনেও অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন—এই অনুষ্ঠান চলাকালীন কোনো বিক্ষোভ হলে “কঠোর ব্যবস্থা” নেওয়া হবে, তারপরও সারা দেশে ব্যাপকভাবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।


 

‘গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই’—জনতার কণ্ঠস্বর

নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, হিউস্টনসহ নানা শহরে আইনপ্রণেতা, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও অধিকারকর্মীরা সমাবেশে বক্তব্য দেন। তাঁরা হাতে আমেরিকার পতাকা ও ট্রাম্প-বিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন।
ফিলাডেলফিয়ার লাভ পার্কে অংশগ্রহণ করেন ৬১ বছর বয়সী নার্স ক্যারেন ভ্যান ট্রিস্ট। তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা এখন অত্যন্ত জরুরি। ট্রাম্প যেভাবে জনস্বাস্থ্য খাতে কর্মী ছাঁটাই করেছেন, সেটাই আমাকে পথে নামতে বাধ্য করেছে।”


 

লস অ্যাঞ্জেলেসে উত্তেজনা, জাতীয় রক্ষীবাহিনীর হস্তক্ষেপ

লস অ্যাঞ্জেলেসে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পরিস্থিতি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। গত সপ্তাহেই গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন।

স্থানীয় অধিকারকর্মী হোসে অ্যাজেতক্লা বলেন, “এটা শুধু কঠোর নয়, বরং অমানবিক। পরিবারগুলোকে আলাদা করা যায় না।”
ফেডারেল বিল্ডিংয়ের কাছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয় এবং টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়। যদিও কয়েক ব্লক দূরে শান্তিপূর্ণ মিছিল অব্যাহত থাকে।


 

‘নো কিংস’ আন্দোলনের তাৎপর্য

‘নো কিংস’ নামটির মাধ্যমে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, তিনি একজন রাষ্ট্রপতির চেয়ে একনায়কতান্ত্রিক শাসকের মতো আচরণ করছেন।


 

বিতর্কিত কুচকাওয়াজ ও জনমত বিভাজন

ওয়াশিংটনে শনিবার সন্ধ্যায় সামরিক কুচকাওয়াজে ট্রাম্প হাজার হাজার ইউনিফর্মধারী সেনাদের সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানান। ট্যাংক, সামরিক যান ও ব্যান্ড পারফর্ম্যান্সে পুরো এলাকা ছিল সরব।
ট্রাম্প বলেন, “আমাদের সেনারা কখনো হার মানে না, কখনো হাল ছাড়ে না। তারা লড়ে, লড়ে, এবং জয় ছিনিয়ে আনে।”

তবে বহু সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং রাজনীতিক এই অনুষ্ঠানকে ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল আত্মপ্রশংসা’ বলে আখ্যা দেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই কুচকাওয়াজে ব্যয় হয়েছে ২৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।


 

ভেটেরানদের সম্মান না রাজনৈতিক প্রচার?

যদিও অনেকে মনে করেন, অনুষ্ঠানটি সামরিক বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই করা হয়েছে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়া মেলভিন গ্রেভস বলেন, “যখন আমি যুদ্ধ শেষে ফিরেছিলাম, তখন কোনো কুচকাওয়াজ হয়নি। আজকের দিনটা আমার কাছে অনেকটা তেমনই।”

অন্যদিকে, তরুণ ভেটেরান ব্রায়ান অ্যাঞ্জেল বলেন, “সেনাবাহিনীর প্রতিটি শাখারই কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য এ ধরনের আয়োজন হওয়া উচিত।”


 

সামরিক কুচকাওয়াজ ও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ: এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা

নিরাপত্তা বিশ্লেষক বারবারা স্টার বলেন, “ইমিগ্রেশন বিতর্ক এবং সৈন্য মোতায়েনের মধ্যে বর্তমান বিভক্তি কুচকাওয়াজকে একটি অস্বস্তিকর আবহে দাঁড় করিয়েছে। সেনাদের অস্ত্রসহ রাজপথে দেখা আর জনগণের প্রতিবাদ একইসাথে চলা – এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।”


 

মিনেসোটায় ট্রাজেডির ছায়া, তবুও আন্দোলন অব্যাহত

মিনেসোটার কিছু অংশে ‘নো কিংস’ আন্দোলনের কর্মসূচি বাতিল করা হয়, কারণ এক রাজনীতিবিদ ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির গাড়িতে ওই আন্দোলনের পোস্টার পাওয়া যায়।
রাজ্য গভর্নর টিম ওয়ালজ তখন জনগণকে বিক্ষোভ এড়াতে অনুরোধ করেন। তবে তা সত্ত্বেও হাজারো মানুষ রাজপথে অংশ নেন।


 

উপসংহার

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে যে মেরুকরণ ও অসন্তোষ বাড়ছে, তারই প্রতিফলন ‘নো কিংস’ আন্দোলন। একদিকে সামরিক গর্বের প্রদর্শনী, অন্যদিকে গণতন্ত্র রক্ষার দাবি—এই দুই বিপরীত ধারাই যেন আজকের আমেরিকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।

LawyersHub Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *