ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা ! Israel-Iran Conflict Raise Possibility of Trade War!

ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা ! Israel-Iran Conflict Raise Possibility of Trade War!

ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা

বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর নেতারা রবিবার জড়ো হয়েছেন কানাডার কানানাস্কিসে জি৭ সম্মেলনের জন্য। কিন্তু এবারের সম্মেলনের আবহ যেন  বাণিজ্য রাজনীতিতে দারুণ প্রভাব বিস্তার করবে—ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বেড়ে চলা সংঘর্ষ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এই বৈঠকের গুরুত্বকে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ

সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিশ্ব নেতাদের অনেককেই হতবাক করেছে। একে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতার নতুন ধারা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের “বিশ্বের নিরাপত্তার কর্ণধার” হিসেবে ভূমিকা কমাতে চান, যা এই উত্তেজনাকে আরও উসকে দিয়েছে।

বিমানভ্রমণের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার জানান, তিনি পরিস্থিতি শান্ত করতে ট্রাম্প, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্রিটেন ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমান ও সেনা সহায়তা পাঠিয়েছে।

স্টারমার বলেন, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে। আমরা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সম্মান করি, কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—এই সংকটের অবসান প্রয়োজন। কারণ এর মাধ্যমে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

সম্মেলনের কেন্দ্রে ট্রাম্পের ভূমিকা

জি৭ সম্মেলনের আলোচনায় ট্রাম্পকে ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি ও কানাডাকে “৫১তম রাজ্য” করার মন্তব্য অনেকের মাঝেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এমনকি গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের আগ্রহও বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়ার পথে গ্রিনল্যান্ডে একটি প্রতীকী সফরে যান। ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে হেলিকপ্টার ক্যারিয়ারে বৈঠক করে তিনি জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত অখণ্ডতার নীতির প্রতি সমর্থন জানান।

একক আলোচনায় ঝুঁকছেন ট্রাম্প

বৈঠকে একাধিক দেশের নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার চেষ্টা করবেন। কারণ, ট্রাম্প সাধারণত বড় টেবিল বৈঠকের চেয়ে একান্ত বৈঠকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে তার একান্ত বৈঠকগুলোও দেশের প্রধানের সাথে হবে তা অনিশ্চিত। অতীতে তিনি ইউক্রেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের একান্ত বৈঠকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রাক্তন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্রেতিয়েন বলেন, “তিনি একটু দাদাগিরি করতে ভালোবাসেন। যদি তিনি আলোচনায় নাটকীয় কিছু করেন, তাহলে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যেতে হবে।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দ্বিধাজনক কূটনীতি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ট্রাম্পকে রাজা চার্লস তৃতীয়ের সঙ্গে রাজকীয় সফরের আমন্ত্রণ দিয়ে সম্পর্ক জোরদার করতে চান। যদিও তিনি নিজেও জানেন, এতে কানাডার মতো যুক্তরাজ্যের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে।

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার ট্রাম্পের মন্তব্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে স্টারমার বলেন, “আমি আমাদের আলোচনা নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না, তবে এটা পরিষ্কার করে দিতে চাই—কানাডা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ এবং কমনওয়েলথের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।”

জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠক

ইউক্রেন যুদ্ধও এবারের সম্মেলনের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হবে তাদের দ্বিতীয় মুখোমুখি সাক্ষাৎ, যেখানে প্রথম বৈঠকে অনেক অম্লমধুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

নতুন আমন্ত্রিতদের নজর ট্রাম্পে

এবারের জি৭ সম্মেলনে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছে ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সবাই চাইছেন ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য শুল্ক ইস্যুতে সুরাহা বের করে ‍সুবিধা নিতে।

জার্মান কর্মকর্তারা অবশ্য “ছয় বনাম এক” ধরণের বৈঠকের ধারণা নাকচ করেছেন। তারা বলছেন, জি৭ দেশগুলোর মধ্যেও নানা বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তাই শুধু ট্রাম্পকেই আলাদা করে দেখার কিছু নেই।

সম্মেলনে ইরাস ও ইস্রাইলের যুদ্ধ বিষয়েও আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে

২০১৮ সালের জি৭ সম্মেলনের কানাডীয় সমন্বয়কারী পিটার বোহেম বলেন, “সম্মেলনের অনেকটাই এখন যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনায় ঘুরে যেতে পারে। হয়তো একটি যৌথ বিবৃতিও দেওয়া হতে পারে। কারণ, পররাষ্ট্রনীতি এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”

সম্মেলনের আলোচ্য মূল বিষয় হতে পারে :

জি৭ সম্মেলন ২০২৫, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ, কেয়ার স্টারমার, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ভলোদিমির জেলেনস্কি, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি, কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি।

আজকের ব্লগটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

LawyersHub Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *